গঙ্গাসাগর দিঘী - আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
গঙ্গাসাগর দিঘী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় অবস্থিত। এই দিঘীটিকে ঘিরে নানান লোককথা প্রচলিত আছে। এ দীঘির রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্বও। চমৎকার প্রাকৃতিক শোভা রয়েছে এই দিঘীর। সূর্যের সোনালি আলোয় চিকচিক করে দীঘির জল। দেখলেই মন ভরে যায়।
গঙ্গাসাগর দীঘির ইতিহাস
কথিত আছে, প্রায় পনেরশ বছর আগের ঘটনা। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা বীর বিক্রম ঈশ্বরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর তৎকালীন সময়ে কর আদায় করতে আসতেন কুমিল্লায়। তখন এ অঞ্চলে পানীয় জলের সুব্যবস্থা ছিল না। এলাকার চারদিকের শুষ্ক পরিবেশ দেখে রাজা চিন্তিত হন। আশে পাশে কোন দীঘি নেই। তখন তিনি দীঘি খনন করার কথা ভাবলেন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ, খনন করা হল বিশাল এই দীঘি। শুধু টলটলে পানির দীঘি নয়, এর উত্তরে রাজা বিশাল একটি ঘাটও তৈরি করে দিলেন। গঙ্গা দেবীর নামানুসারে দীঘির নাম দিলেন গঙ্গাসাগর।
এই দিঘীর সৃষ্টি নিয়ে আরো একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। অতীতে নৌ-পথের গুরুত্ব যখন অধিক ছিল, তখন হাওড়া নদীর তীরবর্তী গঙ্গাসাগর ছিল মূলত আগরতলার নদী-বন্দরস্বরূপ। । গঙ্গাসাগরের পূর্বনাম ছিল রাজদরগঞ্জ বাজার। এ বাজার তৎকালীন সময়ের বিশিষ্ট ব্যাংক ‘দি এসোসিয়েটেড ব্যাংক লি. অফ ত্রিপুরা’র প্রধান অফিস হিসেবে স্থাপিত হয়েছিল। তখনো উপমহাদেশে ব্যাংকের প্রচলন সঠিকভাবে হয়নি। তাছাড়া ত্রিপুরা রাজ্যের ভাটি অঞ্চলের খাজনা আদায়ের মহল অফিসও এ রাজদরগঞ্জ বাজারেই ছিল। রাজদরগঞ্জ বাজারের পরবর্তী নাম মোগড়া বাজার। এখানে ‘সেনাপতি বাড়ি’ নামে একটি জায়গা আছে। তাই মনে করা হয়ে থাকে যে, ত্রিপুরা-রাজ্যের কোন এক সেনাপতি এখানে বসবাস করতেন স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে। ত্রিপুরা-রাজা এখানে একটি বিরাট দীঘি খনন করান। গঙ্গা দেবীর নামানুসারে দীঘির নামকরণ করেন ‘গঙ্গাসাগর দীঘি’। সেই থেকেই জায়গাটির নাম গঙ্গাসাগর হয়ে যায়।
অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই গঙ্গাসাগর। গঙ্গাসাগর দীঘির পশ্চিম পাড়ে একাত্তরের গণকবরে শুয়ে আছেন ৩৩ জন শহীদ। প্রাণ দিয়েছেন তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং জামায়াতে ইসলামী গঠিত ও মোবারক মিয়া পরিচালিত রাজাকার বাহিনীর হাতে।এই দীঘির উত্তরপাড়ে তফসিল কাচারী রাজার কর আদায়ের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। দীঘির উত্তরপাড়ার লাগোয়ো অন্ধকার ঘরটির ভেতরের মেঝেতে এখনও কয়েকটি সিন্দুকের শেষাংশের ছাপ দেখতে পাবেন। তবে কালের পরিক্রমায় কাচারী ঘরটি প্রায় বিলুপ্তির পথে।
যেভাবে যাবেন:
আখাউড়া বাজার থেকে অটোতে চড়ে গঙ্গাসাগর দীঘি পৌঁছে যেতে পারবেন। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে সিএনজি করে যেতে পারেন গঙ্গাসাগর দিঘী।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন